বিস্তারিত
  • মানবদরদী, শিক্ষানুরাগী জমির আহমদ


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 28 November, 2020, 5:40 PM || মুক্তমত, সিলেট


    কামরুল আশিকী :: পৃথিবীতে যারা নিজের ব্যক্তি স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের উপকার করে ঠাই নিয়েছেন মানুষের মনে-জমির উদ্দিন আহমদ তাদেরই একজন। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মরহুম আবদুস সালামের সুযোগ্য উত্তরসুরি তিনি।

    জীবনের ৯০টি বসন্ত পেরিয়ে আসা এই মানবদরদী বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতেই শয্যাশায়ী। এলাকাবাসির কাছে এক বিশিষ্ট ও উজ্জ্বল ব্যক্তি হিসেবেই সম্মানের আসনে আসীন জমির উদ্দিন আহমদ।

    অত্যন্ত সমাজসচেতন এই পরোপকারী মানুষটি একজন সুপরিচিত শিক্ষানুরাগীও। সমাজসেবা, শিক্ষার উন্নয়নের নিরলস প্রচেষ্টার অবদান তাকে এলাকাবাসীর আত্মার আত্মীয়তে পরিণত করেছে। জীবনের প্রায় পুরো সময় তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন জনকল্যাণে।

    চাইলে মূল্যবান ওই সময়টা নিজের অর্থ-বিত্ত সমৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারতেন। কিন্তু, সমাজসেবা ও শিক্ষার উন্নয়নেই তিনি ব্যয় করেছেন নিজের সব সক্ষমতাটুকু। জমির উদ্দিন আহমদ এখন শুধু একটি নাম নয়। যেন একটি প্রতিষ্ঠান। মানুষের একান্ত আপনজন।

    বিপদের বন্ধু। তার দয়া ও মমতার পরশ যেন সকলের তরে সমান। যে কারো দুঃখ-দুর্দশা, বিপদে-আপদে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজের আরাম-আয়েশকে উপেক্ষা করে ছুটে চলেছেন অবিরাম।

    তার জীবনের লক্ষ্যই যেন মানবসেবা। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদে তিনি বিশ্বাসী নন। তাই, সকলের সাথে মিলেমিশে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জমির উদ্দিন আহমদ।

    ১৯৫৪ সনে ডিগ্রি উত্তীর্ণ জমির উদ্দিন আহমদ ব্যক্তি জীবনে ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। তিনি দীর্ঘদিন মার্কিন মুলুকে প্রবাস জীবন কাটালেও এলাকার প্রতি ছিল আলাদা এক টান। প্রবাসে থেকে পাশে থেকেছেন এলাকাবাসীর।

    তার একমাত্র ছেলে মঞ্জুর আহমদ যেন পিতারই অবিকল প্রতিচ্ছবি। তিনিও তার সুযোগ্য পিতার মত মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। নীতি ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব জমির উদ্দিন আহমদের সবচেয়ে বড় অবদানটি শিক্ষার উন্নয়নে।

    তিনি ১৯৬৮ সনে তার বাড়ির অদূরে (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর সীমান্ত এলাকায়) প্রতিষ্ঠা করেন জমির আহমদ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়। যে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে এতদঞ্চলের একটি বাতিঘর।

    যে ঘরের আলোয় ক্রমশই আলোকিত হচ্ছে মানুষ ও সমাজ। এছাড়াও জমির উদ্দিন আহমদ স্বাস্থ্যসেবায়ও রেখেছেন অসামান্য অবদান। নিজের মূল্যবান জমি দান করে দৌলতপুর কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

    নিরবে তার দু’হাতে মানুষজনকে দানের বিষয়টি নাই বা বলা হল। কিন্তু সমাজের সকল ক্ষেত্রেই তিনি নিঃস্বার্থভাবে যুক্ত রেখেছেন নিজেকে। কখনোই নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেননি। তার বিভিন্ন অবদান সবিস্তারে তুলে ধরলে লিখার কলেবরই বৃদ্ধি পাবে। আপাদমস্তক শিক্ষানুরাগী জমির উদ্দিন আহমদের একমাত্র ছেলে মঞ্জুর আহমদও হয়েছেন পিতার মত। তারও ব্রত যেন সমাজসেবা-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সর্বোপরি মানুষের সার্বিক উন্নয়ন।

    তিনি তার পিতার নামানুসারে নিজ গ্রামের অদূরে যাত্রী সাধারণ কথা চিন্তা করে স্থাপন করেছেন শরীষপুর সিএনজি স্ট্যান্ড জমির আহমদ যাত্রী ছাউনি। নির্মাণ করে দিয়েছেন পারকুল মাঝপাড়া জামে মসজিদের হুজরাখানা, শরীষপুর লম্বাহাটি সড়কের গার্ডওয়াল। মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শনিরগাঁও আয়েশা আহমদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা।

    বহুগুণে ও অভিধায় অভিষিক্ত এবং মানুষের ভালবাসায় সিক্ত নিঃস্বার্থ মানবদরদী, সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী জমির উদ্দিন আজ জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তার সময় কাটছে এখন বিছানায়। তিনি তার কর্মে-গুণে আর অবদানে ঠাই নিয়েছেন সকলের হৃদয়ে। তিনি সুস্থতাসহ আরো দীর্ঘজীবি হবেন। এটাই সকলের প্রার্থনা।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ