বিস্তারিত
  • বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে ডিজিটাল সেন্টার


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 13 November, 2020, 6:16 PM || মুক্তমত


    বর্তমানের উপর দাড়িঁয়ে যারা ভবিষ্যতকে দেখে তাঁরা হলো ভিশনারী। বিশ্বে যে কয়েকজন নেতার মধ্যে ভিশনারী নেতৃত্বের গুণাবলি দেখা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

    ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের আবিষ্কারের পর মুলত ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু এটি গভীরভাবে উপলব্দি করেন। ফলে ১৯৭২ সালে পরই আইটিইউর সদস্যপদ লাভের জন্য চেষ্টা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য পদ লাভ করে।

    এর প্রায় ২১ মাস পর ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইট আর্থ-স্টেশনের (ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র) স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই ঠিক ৪৩ বছর পর ২০১৮ সালের ১২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উক্ষেপন করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট এলিট ক্লাবের সদস্য হয়।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আজকের এই ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ রোপণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোপিত বীজ থেকে জন্ম নেয়া চারাগাছটির বিকাশ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন। সঠিক পরিচর্যার অভাবে চারাগাছটির বেড়ে উঠা থেমে যায় দীর্ঘ সময়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় “ডিজিটাল বাংলাদেশ” কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর পক্ষে গোটা জাতি রায় প্রদান করে। “ডিজিটাল বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়।

    তারই অংশ হিসাবে “জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা” এ স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করে দেশটির ডিজিটাল রূপান্তরের স্থপতি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই বলেছেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এর ধারণাটি পেয়েছেন তিনি তার পুত্র এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে। ইউনিয়ন পরিষদ দেশের প্রাচীনতম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। এটি তৃনমুল পর্যায়ে জনগণের সবচেয়ে কাছের সরকার। ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক কেন্দ্র ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ পরিষদকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে।

    ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয় থেকে এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি এর প্রশাসক মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। ইউডিসি’র মূল লক্ষ্য হল, ইউনিয়ন পরিষদকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা, যাতে এই সব প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের মধ্যে একটি তথ্য ও জ্ঞান-ভিত্তিক দেশ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি এই সব কেন্দ্র সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবাসমূহ জনগনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে, প্রযুক্তি বিভেদ দূর করতে ও সকল নাগরিককে তথ্য প্রবাহের আধুনিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করতে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে ।

    ইউডিসি প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে, যেখানে মানুষকে আর সেবার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে না, বরং সেবাই পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। অবাধ তথ্য প্রবাহ জনগনের মতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের ফলে সাধারন নাগরিকগণ এখন সহজে, কম খরচে ও ঝামেলাহীনভাবে প্রায় ২৭০ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা ইউডিসি থেকে পাচ্ছে। ইউডিসি’র উল্লেখযোগ্য সরকারি সেবাসমূহ হলো: জমির পর্চা, জীবন বীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারি ফরম, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রভৃতি। বেসরকারি সেবাসমূহ হলো: মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল, চাকুরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজী শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্সিং, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি, লেমিনেটিং প্রভৃতি। একজন দরিদ্র কৃষক ইউডিসি থেকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার মধ্যে দিয়ে মতায়িত হচ্ছে।

    এতে তার কৃষি উৎপাদন এবং উপার্জন-দুটোই বাড়ছে। একজন সাধারণ নাগরিক উপজেলা বা জেলা অফিসে না গিয়েও জমির পর্চার নকলের জন্য আবেদন করতে পারছেন, যা তার সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় ঘটাচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টারে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ায় গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ঘরে বসে বয়ষ্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বিভিন্ন ভাতাসহ যাবতীয় ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। এভাবে ইউডিসি গ্রামীণ মানুষকে বিভিন্ন সরকারি তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর ও জনগনের প্রতিষ্ঠান-এ পরিণত করেছে। আর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারকার্যকর করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বঘোষিত ডিজিটাল সন্তান উদ্যোক্তাগণ।

    প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন করে উদ্যোক্তা কাজ করেন একজন ছেলে ও একজন মেয়ে। একজন নারী উদ্যোক্তা থাকার ফলে কেন্দ্রে নারীদের সহজে প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্যোক্তা একজন বিনিয়োগকারী, চাকুরীজীবি নয় এবং জনগণকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত আয় থেকেই উদ্যোক্তা তার জীবিকা নির্বাহ করেন। অর্থাৎ ৪,৫৪৭টি কেন্দ্রে মোট ৯,০৯৪ জন তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তার আত্ম-কর্মসংস্থান হয়েছে। ইউআইএসসি’র সফল অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে, দেশের ৩১৯টি পৌরসভায় ‘পৌর ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি)’ ও ১১টি সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে ৪০৭টি ‘নগর ডিজিটাল সেন্টার (সিডিসি)’ স্থাপন করা হয়েছে।

    এছাড়া অনেক ডিজিটাল সেন্টার আবার সাব-সেন্টার স্থাপন করে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ মডেলে পরিচালিত, সেহেতু সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাগণও বিনিয়োগ করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোক্তা চরম প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে ভাল কাজ করছেন, এবং নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি ই-সেবা প্রদানের মাধ্যমে মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন। ইউডিসি’র কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন উপজেলা ই-গভ: ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেলা ই-গভ: ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে তদারকিসহ ইউডিসি টেকসইকরনের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত।

    জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারগণ এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। ক্যাবিনেট ডিভিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ এ কাজের সমন্বয় করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউডিসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউডিসি’র কার্যক্রমসমূহ মনিটরিং করে থাকেন। আর এ কাজে নিবিড়ভাবে সহযোগীতা করেন ইউনিয়ন পরিষদ সচিব।

    জেলা তথ্য কর্মকর্তা ইউডিসি’র প্রচার-প্রচারনায় সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ সাধারন মানুষ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্যদের জন্য একটি প্রেস্টিজিয়াস প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এর ফলে ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি বর্তমানে মানুষের আস্থা অনেক বেড়েছে। ডিজিটাল সেন্টার হয়ে উঠেছে গ্রামের সাধারণ মানুষের আস্থার স্থান। ইতিমধ্যে ডিজিটাল সেন্টার আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছে। ১১নভেম্বর ২০২০ ডিজিটাল সেন্টার ১০ বছরে পা রাখছে।

    ডিজিটাল সেন্টার বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বর্তমান রুপ ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে ভূমিকা পালনকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে সারা বিশ্বের রোল মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ডিজিটাল সেন্টার।

    তৃণমূলে থেকে কাজ করলেও দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গর্বিত অংশীদার আমিও, এ কথা ভাবতেই অন্য এক আবেগ আপ্লুত করে আমাকে। জয়তু ডিজিটাল বাংলাদেশ, জয়তু ডিজিটাল সেন্টার।

    লেখক : সুরমান আলী সুমন উদ্যোক্তা, অলংকারী ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উপজেলা: বিশ্বনাথ, জেলা: সিলেট।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ