বিস্তারিত
  • ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর পরিবারকে ২লাখ টাকা দিয়ে নিষ্পত্তির চেষ্ঠা


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 25 May, 2018, 12:48 AM || বিশ্বনাথ


    সিলেটের বিশ্বনাথে দুই সন্তানের জনক এক প্রবাসী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হওয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরীর ইজ্জতের মূল্য হিসেবে তার পরিবারকে মাত্র দুই লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তির করা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। কিশোরীর পিতা ও সৎ মা ওই টাকা গ্রহন করলেও নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী সে টাকা গ্রহন করতে ইচ্ছুক নয় বলে সাংবাদিকদের জানায়।
    জানা গেছে, গত ১৪এপ্রিল উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের দিনমজুর তাহির আলীর ১৫ বছর বয়সী কিশোরী কন্যাকে বাড়িতে তার দাদির কাছে রেখে পিতা-মাতা পার্শ্ববর্তি দৌলতপুর ইউনিয়নের ধনপুর গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। ওই দিন বিকেল ৪টায় কিশোরীর দাদী হাওর থেকে গরু নিয়ে আসতে বাড়ির বাহিরে গেলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিশোরীর বসত ঘরে প্রবেশ করে একই গ্রামের (পার্শ্ববর্তি বাড়ির বাসিন্দা) মৃত মসকন্দর আলীর পুত্র দুবাই প্রবাসী আছর আলী উরফে আফছর জোরপূর্বকভাবে কিশোরীকে পাষবিক নির্যাতন করে। এসময় প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে আসলে আছর আলী পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে নির্যাতিতা কিশোরীর পিতাকে ভয়ভিতি দেখিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে একপর্যায়ে গত ১৭ এপ্রিল রাতে বিষয়টি থানা পুলিশ জানতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই রাতেই থানা পুলিশ নিজ বাড়ি থেকে অভিযুক্ত আছর আলীকে আটক করে এবং ভিকটিমকে থানায় নিয়ে আসে। থানায় নিয়ে আসার পর নির্যাতিত কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে আটককৃত আছর আলী উরফে আফছরকে অভিযুক্ত করে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর আছর আলীকে থানা হাজত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে থানায় ভিড় জমান দালালরা। দালালদের মাধ্যমে নির্যাতিত কিশোরীর পিতার সাথে আছর আলীর স্বজনদের চলতে থাকে দফারফা। একপর্যায়ে কিশোরীর পিতাকে দেড় লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তিনি (কিশোরীর পিতা) তাতে সম্মতি জানান। কিন্ত এরই মধ্যে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে পুলিশ। একপর্যায়ে পরদিন ১৮এপ্রিল বুধবার বেলা ২টায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড (এফআইআর) করে পুলিশ। এরপর আটককৃত প্রবাসী আছর আলী উরফে আফছর আলীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন এবং ভিকটিম কিশোরীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়।
    এদিকে, অভিযুক্ত আছর আলী উরফে আফছরকে জেলহাজতে প্রেরণের পর থেকে এলাকার কতিপয় মাতব্বররা বিষয়টি নিস্পতির উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে উভয় পক্ষের লোকজনকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন এবং একপর্যায়ে কিশোরীর পিতা ও সৎ মাকে টাকার লোভ এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি ও জেলহাজত থেকে অভিযুক্ত আছর আলীকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন।
    এলাকায় জনশ্রতি রয়েছে, সম্প্রতি আছর আলীর মামা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আয়ূব আলী দেশে ফিরে তার ভাতিজা নুরুল ইসলাম, একই গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী রফিক মিয়া, শ্রীধরপুর গ্রামের শাহজাহান সিরাজ, ইলামেরগাঁও গ্রামের আমিন উল্লাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন গংদের মাধ্যমে আছর আলীর পরিবারের কাছ থেকে ৫লাখ টাকা নিয়ে ভিকটিমের পরিবারকে ২লাখ ৮০হাজার টাকা বিষয়টি নিস্পত্তি করা হয়েছে। এরপর গত ১৫ মে আদালতে জামিন করানোর মাধ্যমে জেলহাজত থেকে আছর আলীকে মুক্ত করা হয়। জেলহাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার এক সপ্তাহ পরই গত মঙ্গলবার দুবাই চলে যান আছর আলী।
    বৃহস্পতিবার সরেজমিন মামলার বাদি তাহির আলীর (ভিকটিমের পিতা) বাড়িতে স্থানীয় সাংবাদিকরা গেলে তিনি ও তার ২য় স্ত্রী টাকা গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে যত টাকার প্রয়োজন হবে তা আসামী পক্ষ বহন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আছর আলীকে জেলহাজত থেকে মুক্ত করতে তিনি রাজি হয়েছেন বলে জানান। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের কাছে ভিকটিমের দাদি কাচা বেগম স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত আছর আলীর চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আয়ূব আলী কাছ থেকে তারা দুই লাখ টাকা পেয়েছেন। এছাড়া মামলা নিস্পত্তি ও মধ্যস্থতাকারীদের বিষয়টি তিনি (আয়ূব আলী) দেখবেন বলে তাদেরকে বলা হয়েছে।
    এসময় নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি টাকা চাই না, যে আমার জীবন নষ্ট করেছে আমি তাকে চাই।’
    অভিযুক্ত আছর আলীর চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, আমার চাচা আয়ূব আলী (যুক্তরাজ প্রবাসী) কিভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি করেছেন তা তিনি জানেন। এব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।
    এব্যাপারে শ্রীধরপুর গ্রামের শাহজাহান সিরাজ ও ইলামেরগাঁও গ্রামের আমিন উল্লাহর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
    স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, কিভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়েছে আমি তা জানি না। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে রফিক মিয়া (আছর আলীর মামা) বলেছেন আদালতে একটি কাগজ দিতে হবে। আর সেই কাগজে আমার স্বাক্ষর লাগবে। তাই আমি স্বাক্ষর দিয়েছি।
    মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বনাথ থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মামলাটি তদন্তাধিন রয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে মামলার চার্জশীট দেওয়া হবে।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ