বিস্তারিত
  • সিলেট ২ আসন : মনোনয়ন দৌড়ে প্রার্থীরা


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ :: || 03 February, 2018, 6:50 PM || সিলেট


    সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জের একাংশ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন, নাকি এই আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় জাতীয় পাটি (জাপা’র) প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপিই বহাল থাকছেন এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা কল্প কাহিনী চলছে।
    দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তায় দলের কর্মী ও সমর্থকেরা। এই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগ থেকে তিন চৌধুরী এবং খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব সম্ভাব্য প্রার্থী মুহাম্মদ মুনতাসির আলী জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন কেড়ে আনতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন, এক্ষেত্রে কেউ কাউকে ছাড় দিতেও রাজি নয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার ফলে সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া এমপি নির্বাচিত হন।
    আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশে জাপা’র সাথে আসন সমন্বয়ের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত দেখিয়ে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী মেনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এর ফলশ্রুতিতে সিলেট-২ আসনটি আওয়ামীলীগের হাত ছাড়া হয়ে যায়।
    আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা এবং আওয়ামীলীগের জোট থাকলে জাতীয় পার্টি এ আসনটিকে ধরে রাখার জোর তৎপরতা চালাবে বলে শুনা যাচ্ছে। তবে আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশম সংসদ নির্বাচনে জামায়াত, বিএনপির জ্বালাও, পোড়াও রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁছাতে সংবিধান রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্টার স্বার্থে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সিলেট-২ আসনটি জাপাকে ছাড় দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির যৌথ সমন্বিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগাম কঠোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে বিগত সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী সাবেক এমপি সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীই এই আসনে নৌকার কান্ডারী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলো থেকে এমনি আভাস পাওয়া গেছে।
    দলীয় সূত্র মতে, সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু। সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তাঁদের অনুসারীরা বেশ উজ্জীবিত রয়েছেন। সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা মনে করেন ক্লীন ইমেজধারী ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম.ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এমপি হওয়ার সুবাদে তিনি অনেকটাই সফল ছিলেন। তিনি দলের প্রয়োজনে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, শফিকুর রহমান চৌধুরীকে টেক্কা দিতে আনোয়ারুজ্জামান আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি দলীয় মনোয়ন পাওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন।

    আনোরুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারীরাও তিন উপজেলায় তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও তাঁর অনুসারীদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন ফলশ্রুতিতে শুধুমাত্র বিশ্বনাথে তাঁর অনুসারী দলীয় নেতাকর্মীরা পারস্পরিক মতবিনিময় করছেন বলে জানা গেছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও ইতিমধ্যে সেখান থেকে সিলেট-২ আসনের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন বলে তাঁর অনুসারীদের মুখ থেকে এমনী আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলুও এই আসনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আনুষ্টানিক ভাবে ঘোষনা দিয়ে তিনি দলীয় ও সামাজিক বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত থেকে নিজের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। তাঁর অনুসারীরা মনে করছেন দলীয় মনোনয়ন পেতে জগলু চৌধুরীও এবার শক্ত হাতে হাল ধরবেন। অন্য দিকে এই আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়াও আওয়ামী লীগের তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে টেক্কা দিয়ে পুনরায় জোটের পার্থী হয়ে নির্বাচন করতে জাপার’র কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে জোর লবিংসহ মাঠ পর্যায়েও কাজ চালাচ্ছেন। বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথের জাপা’র নেতৃবৃন্দরা মনে করছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামীতেও জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এহিয়া চৌধুরী জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন।
    সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান চৌধুরী জগলু বলেন, দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে কেউ আগাম ওভার কনর্ফাম হওয়ার সুযোগ নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট থাকবে না মহাজোট থাকবে তা সেটা দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দই সিন্ধান্ত নিবেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেইে একাদশ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। বিএনপি গত নির্বাচন বয়কট করায় আওয়ামীলীগের কল্যাণেই মহাজোটের প্রার্থী হয়ে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তুু নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ও তাঁর অনুসারী উন্নয়নের নামে নিজেদের আখের গোঁছাতে ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে এলাকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবই করুন আকার ধারন করে আছে। সম্প্রতি ওসমানীনগরের দুটি কলেজের ভবন নির্মানের কাজে অনিয়ম নিয়ে তিনি যে কৃতৃত্ব দেখাতে ছেয়েছেন তা এখন দিবালোকের মতো পরিস্কার হয়ে উঠেছে। কারন এই দুটি কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি থাকার পরও কলেজ দুটির ভবন নির্মানের কাজের শুরুতে অনিয়ম না ধরে নির্মানের শেষ পর্যায়ে এসে নাঠকীয় ভাবে অনিয়মের অভিযোগ এনে তৃপ্তির ডেকর তোলা হলেও এক বছর পর তিনি কাজের মান নিয়ে যে প্রশ্ন তুলছেন তা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত।
    শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে যা হয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর পুনরাবৃত্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্র্থর্াী ছাড়া আর কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কারন বঙ্গবন্ধুকে সড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাইকে নিয়ে ঐক্যভাবে কাজ করার ফলে আমার এবং দলের পক্ষে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নেত্রী আমাকে নমিনেশন দিয়েছিলেন কিন্তু দেশ, সংবিধান ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তখন জাতীয় পার্টির সাথে জোট করা হয়েছিল। এর সুবাধে এলাকার সার্বিক উন্নয়নকে বাঁধা গ্রস্থ করতে এখানে সড়যন্ত্র মূলকভাবে জাতীয় পার্টি কৌশলে এআসনটি নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর ও আমি নেত্রীর নির্দেশে দলের জন্য কাজ করছি এবং এলাকার উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ আছে থাকবে কিন্তু আওয়ামীলীগ নামধারী কিছু দালাল জামায়াত-বিএনপির সাথে আতাত করে দলের ভাব মুর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামীলীগের কল্যানে এমপি নির্বাচিত হয়ে বর্তমান এমপি এহিয়া চৌধুরী কমিশন বানিজ্যেসহ বিভিন্ন ভাবে লুটপাট চালিয়ে সরকার ভাবমর্তী ক্ষুন্ন করার কাজে লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ দূর্বল হলে জামায়াত বিএনপি শক্তিশালি হয়। বর্তমান জাপা,র সমর্থিত এমপি আওয়ামীলীগ নামধারী এসব নেতাদের নিয়ে জামায়াত বিএনপির এজেন্ডা বাস্থবায়নে লিপ্ত রয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে সকল ষড়যন্ত্রের জাল বুনে এ আসনে নৌকা মার্কার বিজয় হবে বলে জানান তিনি। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ন-মহাসচিব সিলেট-২ আসনের এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আগামীতে একক ভাবে নির্বাচন করবে। বর্তমানে জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই দেশের স্বার্থে ঐক্যজোটের সরকারে রয়েছে। জোটগত নির্বাচন হলেও এ আসনটি কোন অবস্থায়ই আওয়ামীলীগকে ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামীলীগ নেতাদের কর্তৃক তাঁর বিরুদ্ধে আনা লুটপাট ও কমিশন বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। কারন আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার যা উন্নয়ন হয়েছে যা আর কোন সংসদস্যেদের আমলে হয়নি।এছাড়া এখানে আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। উন্নয়ন বরাদ্ধ আসার পর আমি আওয়ামীলীগ দুটি গ্রুপের নেতা কর্মীদের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করে মেম্বার চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বরাদ্ধগুলো বন্ঠন করা থাকি । এখানে আমি আমার দলের কোন নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। বরং আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলা নির্বাহী এসব প্রকল্পবাস্থবায়ন কর্মকর্তার উন্নয়ন বরা
    মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে রাজনীতি করি। মাঠ পর্যায়ে আমার একটা ভাল অবস্থান আছে। মানুষ আমাকে ভালবাসে, এক্ষেত্রে আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করি এবং সিলেট ২ আসনে বিজয় লাভ করে জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসন উপহার দিব।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ