বিস্তারিত
  • মৌলভীবাজার-১: মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ


    মৌলভীবাজার সংবাদদাতা: || 18 January, 2018, 1:23 PM || মৌলভীবাজার


    মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে মৌলভীবাজার-১ আসনটি গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জোর প্রচারণা শুরু করেছেন।

    মৌলভীবাজার-১ মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ

    এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি। তার অনুসারী নেতাকর্মীদের মতে তিনিই দলের একক প্রার্থী। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন এমনটাও শোনা যাচ্ছে।
    এদিকে বিএনপির চার প্রার্থী হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বসে নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও।
    বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং জুড়ী উপজেলার ৬ ইউনিয়ন নিয়ে মৌলভীবাজার-১ আসন গঠিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী আহমদ রিয়াজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহাব উদ্দিন।
    আওয়ামী লীগ সরকার তাকে জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত করে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়াও গেলো ২৮ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
    এক সময়ের নৌকার ঘাটি খ্যাত এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হচ্ছে ১৯টি চা বাগানের শ্রমিক ভোটার। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ দুর্গে প্রথম আঘাত হানে জাতীয় পার্টি (এরশাদ)।
    ৯১ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং ২০০১ সালের জোটবদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন।
    ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শাহাব উদ্দিন এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সাল এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পরপর তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুইপ শাহাব উদ্দিন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন নিশ্চিত করে তিনি জানান, এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। গেলো দুই মেয়াদে বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলায় ২১টি স্কুল এমপিওভুক্ত, সুজানগর পাথারিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা, ৭০টি প্রাইমারি স্কুলের ভবন নির্মাণ, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জুড়ী-বড়লেখা-চান্দগ্রাম সিএন্ডবি সড়ক সংস্কার ও ৫০টি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন।
    তিনি আরো বলেন, তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট আধুনিক রেস্ট হাউজ, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁঠালতলী-মাধবকুণ্ড রাস্তা সংস্কার করেছেন। বড়লেখা ও জুড়িতে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেছেন। এ বছর বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের পক্ষে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
    বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনকে সাহায্য-সহযোগিতা, নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করছে যাচ্ছেন। তার এই কর্মকাণ্ডকে অনেকেই সংসদ নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি বলেই ইঙ্গিত করেন। এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, দলের অনেকেই তাকে প্রার্থী হতে বলছেন।
    এদিকে নির্বাচনী মাঠে বিএনপির ৪ নেতা প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকার ব্যাপক যোগাযোগ রাখছেন।
    তিনি জানান, শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে আর নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনয়ন দিলে আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন।
    নেত্রীর মুক্তি, গণতন্ত্র হত্যাসহ ১২টি অভিযোগ এনে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে ‘টক অব দ্য বাংলাদেশে’ পরিণত হন দারাদ আহমদ। তিনি বিভিন্ন দেশে বিএনপির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের এক করার লক্ষে দীর্ঘদিন কাজ করে গেছেন।
    দারাদ আহমদ বলেন, রাজনীতিতে যখন বিএনপির দুঃসময় ঠিক সেই সময়ে দলের একজন কর্মী হয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারিনি। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা ছাত্রজীবন থেকে। জীবনের এ পর্যায়ে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। এখন দল মনোনয়ন দিলে আমি ধানের শীষের বিজয় চিনিয়ে আনতে সক্ষম হব।
    জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যায়। তিনি এলাকার ১৬টি ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০ পুস্তিকা বিতরণ, প্রায় ৬ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এছাড়া নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন তিনি।
    নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে তৃণমূলে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
    অপরদিকে কাতার বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুল হক সাজু যুবদলের রাজনীতির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকায় বিএনপির পক্ষে জনমত সৃষ্টি ও দলকে সুসংঘটিত করার কাজে জড়িত। মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে ২০০৮ সালেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। শরীফুল হক সাজু আরটিভি অনলাইনকে বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মী তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
    এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি চালাচ্ছেন বড়লেখার আহমেদ রিয়াজ ও জুড়ী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম। আহমেদ রিয়াজ জানান, মৌলভীবাজার-১ ও মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি মাঠে কাজ করছেন।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ