বিস্তারিত
  • ‘শ্বশুরবাড়ির ইফতার’ গরিব পরিবারে ভিক্ষার ঝুলি!


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 22 May, 2018, 9:36 PM || মুক্তমত


    বর্তমানে বাংলাদেশের ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারি, বাংলাদেশের সর্বশেষ এবং প্রবাসীর শহর হিসাবে সিলেটকে বলা হয়ে থাকে লন্ডন। যে শহরে বর্তমানে মুসলমানের সংক্ষা ৯৭%, একসময় অনেক কম ছিল। ব্রিটেনের লন্ডন হিসাবে এ শহরের শুনাম অনেক। শুধু সিলেটে শহরেই রয়েছে ৩৬০জন পীর আওলিয়া মাজার। প্রথমত হযরত শাহ জালাল (র) ও হযরত শাহ পরান’র মাজার এ শহরে। বাংলাদেশের ১ম মুসলমান বোরহান উদ্দিন’র মাজারও এ শহরে। দেশের সবচেয়ে ইসলামিক প্রতিষ্টান এ শহরে, বলতে গেলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়বড় আলিমওলামা সহ-বুজুর্গন জন্মগ্রহন করেন এ শহরে। এ শহরে মাদ্রাসার সংক্ষাও কম নয়। সিলেট শহর ইসলাম ধর্মের প্রথম স্থান। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এখানকার একটা প্রতা বর্তমানে গরিবের উপর জুলোম হিসাবে করা হয়ে থাকে, তাও আবার পবিত্র রমযান মাসে।

    আমরা জানি ছেলে মেয়ে বিয়ে সাদী দেওয়া ইসলাম ধর্মের বিধান। বর্তমানে অনেক পিতা মাতা দুঃখ করে বলেন, সিলেটেই শুধু মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটা একটা দুষের মনে হয়। গত কিছু দিন আগে এক ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল, তিনি বলেন গরিব হয়ে মেয়েদের জন্ম নেওয়া বর্তমানে দুষের। কারন হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন আমাদের পরিবারে ভাই বোন মোট ৪জন আমি সবার ছোট। বাবা এখন আগের মত কাজকাম করতে পারেন না, আমি বর্তমানে সংসার চালাই। তিন বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাই খুব কষ্ট হচ্ছে, সামনে পবিত্র রমযান মাস, যে মাসের ফজিলত অনেক। আমরা মুসলমান হিসাবে এ মাসের ফজিলত গ্রহন করার চেষ্টা করি। দুঃখের বিষয় হল এই যে, এ মাসে আমাদের সিলেটের যুগযুগ ধরে চলে আসা একটি কুসংস্কারের কারনে চিন্তিত। আমার আয় সামান্য, সংসার চালানোও বর্তমানে অনেক কষ্টকর তার উপরে বোন। এদের বাড়িতে বেশবেশ ইফতার সামগ্রী না নিলে তাদের শশুরবাড়ীর লোকজন নানান কথা বলে। জানিনা আমার মত গরিব আর কেউ আছেন কিনা, এমন সমস্যায় ভুগেন।

    জানতে চাইলে এ শহরের অনেকেই দুঃখ করে বলেন এ প্রতা বন্ধ করা হউক। রমযানে শ্বশুরবাড়ি থেকে রকমারি ইফতার এবং আম-কাঠালের জমকালো আয়োজনকে ‘না’ বলার সমাজিক উদ্যেগ এখান থেকেই নেই। হয়তো কারো কারো শ্বশুর বাড়ির লোক অনেক পয়সাওয়ালা। তাদের জন্য ট্রাক ভর্তি জমকালো এসব কুসংস্কার প্রতা কিছুই না। কিন্তু গরিব পরিবারের জন্য এ সকল কুসংস্কার ভিক্ষার ঝুলি। অনেক পরিবার মেয়ের বাড়ি ইফতার পাঠানোর জন্যে ভিক্ষার ঝুলি পর্যন্ত নিতে হচ্ছে। আবার অনেককে দেখেছি, বা কাতর হয়ে বলতে শুনেছি, মেয়ের বাড়ি ইফতার না পাঠালে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকতে পারবে না। আবার শুনেছি অনেক যায়গায় এ ইফতার সামগির জন্য অকেকেই শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করেন।

    এ বিষয়ে লন্ডন প্রবাসী বোরহান আলম জাহের আলোকপাত করেন, এরা কেমন ছেলে? তাদের চাহিদাই মেয়ে পক্ষকে এসব করতে বাধ্য করে। তাই এসব প্রতা বন্ধের উদ্যেগ ছেলে পক্ষকেই আগে নিতে হবে। ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে, এভাবে ইফতার সামগ্রী দেওয়া সঠিক নয়। এটি একটি কু-সংস্কৃতি প্রতা। এটা বন্ধের লড়াইয়ে আমাদের সবাই এক হতে হবে। এই কু-সংস্কার এবং চাহিদা মাফিক ইফতার সামগ্রী বন্ধ না হলে, সে’সকল দরিদ্র পরিবার সারা বছর জুরে সুদের ঘানী টানতে হবে। আলিম-জাহিল, শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবার উপরে জেঁকে বসা এই কঠিন সামাজিক কু-সংস্কার বন্ধে এভাবেই উদ্যেগ নিতে হবে। সর্বত্র সচেতন সৃষ্টি করে ‘রাসুল’র ঘোষিত সৌভাগ্যের বার্তাবহ মেয়ে জাতিকে অন্ধকার যুগের অভিশাপের লিস্ট থেকে নিষ্কৃত করতে সকলেই এগিয়ে আসা উচিত মনে করি।

    লেখক : বদরুল ইসলাম মহসিন



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ