বিস্তারিত
  • বিশ্বনাথে বাড়ছে লাশের মিছিল : একমাসে ৪ খুন, আত্বহত্যা ৩, রহস্যজনক মৃত্যু ১ :


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 24 February, 2018, 7:25 PM || বিশ্বনাথ


    বিশ্বনাথে গত এক মাসে ৪ খুন, আত্বহত্যা ৩ ও রহস্যজনক একজনের মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতির দিকে যাচ্ছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায়, বাড়ছে লাশের মিছিল। একের পর এক হত্যাকান্ডের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। গত একমাসে ৪টি হত্যাকান্ডর ঘটনা ঘটেছে। তবে থানা পুলিশ বলছে অপরাধীদের আটক করতে পুলিশি অভিযান চলছে। যে কোনো মূল্যে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হবে।
    উপজেলায় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে অপরাধের মাত্রা। একের পর এক খুন ও শিশু নির্যাতন যেন নিত্যনৈমিত্তিক রুটিনে পরিণত হয়েছে। তার উপর ঘনঘন আত্মহননের ঘটনা এবং এসব ঘটনায় প্ররোচনাকারীদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এ ধরণের বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে প্রবাসী অধ্যুষিত জনপদ বিশ্বনাথে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হলেও থানা পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা জনমনে তৈরি করেছে নানা প্রশ্নের। খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে না পারায় পুলিশের আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি কেউ আবার পুলিশের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
    জানাগেছে, গত ২৫ জানুয়ারী বিকেলে বিশ্বনাথে ডেগার দিয়ে গলা কেটে স্ত্রী লুবনা বেগমকে হত্যা করে
    স্বামী। উপজেলার সদর ইউনিয়নের জানাইয়া গ্রামে এঘটনাটি ঘটে। স্ত্রীকে হত্যার পর ডেগার হাতে নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী হেলাল মিয়া। সে জানাইয়া গ্রামের মৃত হাজী জহুর আলীর পুত্র। এঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ে হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশ হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
    গত ২১ ফেব্রুয়ারী প্রতিপক্ষের হামলায় আহত আবদুর রব মিয়া (৩৮) নামের এক ব্যক্তির মৃত হয়েছে। তিনি উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তিলকপুর প্রকাশিত গোমরাকুল গ্রামের মৃতত রশিদ মিয়ার পুত্র।
    নিহত আবদুর রবের সঙ্গে তার চাচা আশিক মিয়ার জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলাও ছিল। সম্প্রতি মামলার রায় আবদুর রবের পক্ষে যায়। রায় পাওয়ার পর বিরোধপূর্ণ জায়গায় (ডুবা) মাছ ধরতে গেলে আবদুর রব মিয়া ওপর হামলা চালান প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারী ৬টায় তার মৃত্যু হয়।
    গত ৬ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথে মায়ের হাতে ‘তিন বছর বয়সী নাহিদুল ইসলাম মারুয়ান ও ১৮ মাস বয়সী ওয়াহিদুল ইসলাম রুমান’ নামের ২ শিশু পুত্র খুন হন। উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের কোনাউড়া-নোয়াগাঁও গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতরা কৃষক কবির আলী ও রনি বেগম ওরফে বিউটি আক্তার রনি দম্পতির সন্তান। বসত ঘরের অব্যবহৃত একটি বাথরুমে দুটি বড় বালতির মধ্যে পানি নিয়ে তাতে ডুবিয়ে (চুবিয়ে) ‘নাহিদুল ও ওয়াহিদুল’কে হত্যা করেছেন তাদেরই গর্ভধারীনী মা রনি বেগম ওরফে বিউটি আক্তার রনি।
    গত ৭ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথে স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রহিমা বেগম (৩৮) নামের ৪ সন্তানের জননী। উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের রামপাশা দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। রহিমা ওই গ্রামের আমির আলীর স্ত্রী।
    গত ১ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথে সিমা বেগম (১৭) নামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। সে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর দশপাইকা গ্রামের আবদুল মতিনের মেয়ে। সে নিজ ঘরে গলায় উড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করে।
    গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথে কথিত প্রেমিক সুমনের প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে তাছলিমা খানম রিমা (১৬) নামের এক কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যা করে। নিহত রিমা বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, লামাকাজী ইউনিয়নের বিদ্যাপতি (কেশবপুর) গ্রামের ডাক্তার শাহানুর হোসাইন’র মেয়ে। ১৬ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে নিজ ওড়না গলায় পেছিয়ে সে আত্মহত্যা করে। রিমা ‘সিলেট মইন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে’র একাদশ শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ছিলো।
    গত ২১ ফেব্রুয়ারী বিশ্বনাথে রুমন খান (২৭) নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত হয়েছে। সে উপজেলার জাহারগাঁও গ্রামের রহমত খানের পুত্র। ওই রাত অনুমান আড়াইটার সময় তার নিজ বাড়ির পুকুর ঘাটের বয়টকখানা থেকে লাশ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। তার মৃত্যু নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়। যুবকের এমন মৃত্যুকে মেনে নিচ্ছেন না পরিবারের লোকজন। পিতা রহমত খানের সন্দেহের তীর রয়েছে আপনজনের দিকে। তিনি গোপনিয়তার স্বার্থে ওই আপনজনের নাম উল্লে¬খ করতে নারাজ রয়েছেন।
    এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম সাংবাদিকদের বলেন, এ থানা এলাকায় যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই পারিবারিক। এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য তৎপর রয়েছে পুলিশ।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ