বিস্তারিত
  • ওসমানীনগরে বাবা-ছেলের পর এবার না ফেরার দেশে মেয়ে সামিরা : দাফন সম্পন্ন


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 06 August, 2022, 7:35 PM || সিলেট


    শিপন আহমদ,ওসমানীনগর ::- সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ৫ প্রবাসীর মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যাবার পর এবার চলে গেলেন না ফেরার দেশে একমাত্র কন্যা সামিরা ইসলাম (২০)। ঘটনার পর থেকে গত ১১ দিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে সামিরা ইসলাম মারা যায়।
    ব্রিটিশ নাগরিক সামিরা ইসলাম মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈনউদ্দিন।
    গত বুধবার সামিরার মা হোসনে আরা বেগম ও ভাই সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হলেও মা ছেলে পুনরায় তাজপুরের ভাড়া বাসায় উঠেন।
    গত ২৬ জুলাই অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা ও ছেলেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সামিরার জ্ঞান ফিরেনি। সামিরা কিডনি ও লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় বলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়। মৃত সামিরার লাশের ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বাদ আছর উপজেলার দয়ামীর ইউপির পারকুল মাদ্রাসায় নামাজে জানাজা শেষে মৃতের গ্রামের বাড়ি খাতুপুরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

    এদিকে গত বুধবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন। হাসপাতাল ফেরত হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় হোসনে আরা পুলিশ সুপারকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে বাসার ভেতর জেনারেটর চলতো। জেনারেটর চালুর পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হতো।
    বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। জেনারেটর চালুর পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা অস্বস্থিকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন।

    পুলিশ ধারণা করছে, ঘটনার রাতে দীর্ঘসময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস প্রশ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও অপর এক ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরণের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে পুলিশ মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে।

    সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন বলেন, বাসা বাড়িতে জেনারেটর বাইরে থাকে। কিন্তু ওই বাসার ভেতরে জেনারেটর ছিল। পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য বাসার জেনারেটর চালু করা হলে কিছুক্ষণ পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরও অস্বস্থিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার রাতে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। জেনারেটরের ধোঁয়া সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ধোঁয়া থেকে কি ধরণের বিষক্রিয়া তৈরি হতে পারে পরীক্ষার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে তা জানা যাবে। ওসমানীনগর ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ জানতে মারা যাওয়া বাবা ও ছেলের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

    উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে বড় ছেলে সাদিকুলের চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডে তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলকের ৪ তলা বাসার দু’তলায় বাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ ৫ সদস্যের পরিবার। ২৫ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন রফিকুলের শ্যালক দিলওয়ার।

    খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ব্রিটিশ নাগরিক রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্ত্রী হুসনেআরা, বাড় ছেলে সাদিককুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়। রফিকুলের স্ত্রী হুসনে আরা ও ছেলে সাদিককুল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও দীর্ঘ ১১দিন সজ্ঞাহীন অবস্থায় লাইিফসাপোর্টে থাকা সামিরা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ