বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 12 January, 2019, 8:07 PM || তথ্য প্রযুক্তি
মোবাইলে কথা বলার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ভয়েস ওভার এলটিই বা ভোল্টি বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে ।
মূলত ফোরজি বা এলটিই নেটওয়ার্কে কথা বলার প্রযুক্তি হলো এই ভোল্টি, ভোল্টে বা ভোল্ট (VoLTE)। তিন হতে চার মাসের মধ্যে দেশে এই প্রযুক্তি চালু হতে পারে।
আর এই প্রযুক্তি মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে দেশের চলমান পদ্ধতিকে বিলুপ্ত করে দেবে। দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কেউ কেউ ইতোমধ্যে এই ভোল্টি চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে।
শীর্ষ পর্যায়ের একটি অপারেটরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির জন্য বেশ বড় অংকের বিনিয়োগ করতে হবে। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন এটি তিন মাসের মধ্যে চালু করবেন তাহলে তারা তা পারবেন।
আরেকটি অপারেটর জানিয়েছে, ভোল্টি সেবা দিতে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক সময়ে তারা গ্রাহকদের এই সেবা দিতে পারবে।
বিশ্বে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চালু হয় ২০১৪ সালের মে মাসে সিঙ্গাপুরে। সিংটেল গ্যালাক্সি নোট ৩ হ্যান্ডসেটের সঙ্গে মিলে পুরোপুরিভাবে এই ভোল্টি সেবা উদ্বোধন করে।
২০১৭ সালের শেষের দিকে ভারতী এয়ারটেল ভারতে এটি চালু করে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেকশহরডটকমকে জানান, মাসখানেক আগেই এই প্রযুক্তি নিয়ে তারা ভাবতে শুরু করেন। এরপর এটির উপর মোটামুটি কাজ করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে এর জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে গতি আনার কথা বলা হবে। আশাকরছি মাস তিনেকের মধ্যে এটি প্রয়োগ করা যাবে।
‘এটি মোবাইলের বর্তমান ভয়েস কল পদ্ধতিকে বিলুপ্ত করে দেবে। তার মানে মোবাইল নেটওয়ার্ক কেবলমাত্র ইন্টারনেট দেবে এবং সেই ইন্টারনেট দিয়েই টুজি পর্যন্ত ভয়েস কল দেবে কোনো ভয়েস টেকনোলজি ছাড়া’ বলছিলেন তিনি।
ভোল্টিতে কথা বলা যাবে এইচডি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার মানে। যা উপভোগ করা যাবে অডিও-ভিডিও দুটিতেই। বর্তমান মোবাইল নেটওয়ার্কে কল করলে তা কানেক্ট হতে ৯ হতে ১১ সেকেন্ড সময় নেয়। ভোল্টিতে এটি দু-তিন সেকেন্ডে হতে পারে।
এখন মোবাইলে ভয়েসে আসা-যাওয়ার মাঝখানে যে ডিলে থাকে সেটি ভোল্টিতে থাকবে না। মানে ইন্সট্যান্ট একদম মুখোমুখির কথা বলার মতো এটি আদান-প্রদান হবে।
কথা বলতে গিয়ে কেটে কেটে যাওয়ার বিষয়টি একদম হওয়া হয়ে যাবে। কলড্রপ কমে যাবে অনেক।
এছাড়া প্রচলিত সুইচ প্রযুক্তির বদলে এই প্রযুক্তিতে ভয়েস কল প্রতি অপারেটরগুলোর খরচও কম পড়ে।
ভোল্টিতে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার হয় তার মধ্যে রয়েছে, ভয়েস ওভার এলটিই ইউজার ইক্যুপমেন্ট বা VoLTE UE, রেডিও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক বা RAN, কোর নেটওয়ার্ক মানে ইপিসি (EPC) বা ইভল্ট প্যাকেট কোর এবং আইএমএস কোর নেটওয়ার্ক। এই আইএমএস (IMS) হলো আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম।
ভোল্টিতে যিনি কথা বলবেন তার ফোনকে ফোরজি সাপোর্ট তো করতেই হবে সঙ্গে ভোল্টিও সাপোর্ট করতে হবে। তার টেলিকম অপারেটরের ভোল্টি সাপোর্ট সক্ষমতা থাকতে হবে এবং যাকে কল করা হবে মানে রিসিভার প্রান্তেও এই একই রকম বিষয়গুলো থাকতে হবে।
ভোল্টির আগে আমরা দেখি টুজি নেটওয়ার্ক হতে থ্রিজি তারপর ফোরজি পর্যন্ত উন্নয়ন সবক্ষেত্রেই আসলে ডেটার গতির দিকেই মনোযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনে কথা বলার মান উন্নয়নে তেমন উন্নতি দেখা যায়নি।
টুজিতে কখনও কল দেরিতে সংযোগ হচ্ছে, কখনও কথা দেরিতে যাচ্ছে, কখনও ঠিকমতো শোনা যাচ্ছে যায় না আর কলড্রপ তো আছেই। দেশে এই যে থ্রিজি বা ফোরজি নেটওয়ার্ক এটা কিন্তু ভয়েস কলের মাধ্যম নয় । আমরা যখন মোবাইলে কাউকে কল করি তখন সেটি টুজি নেটওয়ার্কে যায়। কলের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক যদি থ্রিজি বা ফোরজিতে থাকে তাহলে সেটি টুজি নেটওয়ার্ক ধরে নেয়।
ফোরজি বা থ্রিজি নেটওয়ার্কে ডেটাকে ছোট ছোট প্যাকেজ বা প্যাকেট আকারে পাঠানো হয়। এখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকলে এই প্যাকেজ বা প্যাকেট যায়। রিসিভারে মানে যাকে পাঠানো হচ্ছে সেই ঠিকানায় গিয়ে প্যাকেটগুলো একসঙ্গে হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
এখন এই নেটওয়ার্কে যদি ভয়েস পাঠানো হয়, তখন কী হবে? যেমন এতে কেউ ফোন করে বললো- শুনছো। তখন এটি প্যাকেজ বা প্যাকেট হয়ে শু-ন-ছো বা আরও ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাবে । কিন্তু এখানে দেখা গেলো অপরপ্রান্তে প্যাকেটটির ক্রম ভেঙ্গে আগে-পরে চলে গেছে মানে ন-শু-ছো বা আরও উলটপালট ক্রমে। এতে তো কথাই বদলে গেলো।
ভোল্টিতে এই প্রযুক্তির উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে এমন সমস্যা নেই। আরও সহজ করে বলা যায় এটি ভিওআইপি প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ।
নিউজ: techshohor.com