বিস্তারিত
  • দেশে ছয়টি আইপি টিভি  বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশন আসছে


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 12 January, 2019, 8:01 PM || তথ্য প্রযুক্তি


    দেশে ছয়টি আইপি টিভি  বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশন আসছে।

    আম্বার আইটি লিমিটেড, বিডিকম অনলাইন লিমিটেড, লিংক থ্রি টেকনোলজি লিমিটেড, ডোজ (কার্নিভাল) ইন্টারনেট, চট্টগ্রাম অনলাইন এবং আইসিসি লিমিটেড নামের ছয়টি কোম্পানি এই আইপি টিভি এবং ভিওডি সেবা চালু করতে যাচ্ছে।

    কোম্পানিগুলো বিটিআরসির কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, যারা আবেদন করেছেন তাদের সকলেই যোগ্য কোম্পানি। ফলে সকলকেই লাইসেন্স দেওয়া হবে বলেও মনে করেন তারা।

    এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো আইপি টিভি নেই। এর আগে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর যখন এই সেবা চালুর বিষয়টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তখন জাগোবিডি অ্যাপস ডাউনলোড করে টিভি চ্যানেল দেখা, গ্রামীণফোনের বায়োস্কোপের মতো কিছু ওটিটি ও ভিওডি সেবা চালু ছিল। সেগুলো তখন মাত্র শুরু।

    তবে বাংলাদেশে নেটফ্লিক্সের মতো সেবা চলছে। নেটফ্লিক্সের মতো কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ভিওডি সেবা বাংলাদেশের গ্রাহকরা ‘বিভিন্ন মাধ্যমে’ পেইমেন্ট করে নিয়ে থাকে। তারা এতে বছরে দুই’শ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেন।

    দুই বছর নিষেধাজ্ঞার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে স্ট্রিমিং সেবা, আইপি টিভি ও ভিওডি সেবা দেওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দেয় বিটিআরসি। তবে এই সেবা দিতে পারবে শুধু ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যারা আইএসপি হিসেবে নিবন্ধিত। আর বিটিআরসি তাদের নতুন সিদ্ধান্তে জানায় এই সেবা দেয়া জন্য আইএসপিগুলোকে আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হবে না। সেক্ষেত্রে শুধু অনুমতি নিলেই হবে।

    বাংলাদেশ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ হাকিম টেকশহরডটকমকে জানান, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমতির পর ডিসেম্বরের শেষদিকে সংস্থাটির সঙ্গে বৈঠকে এই সেবার বিভিন্ন নীতিগত ও পরিচালনাগত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন আসবে।

    ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের এই নেতা জানান, তারা বিটিআরসির কাছে দাবি করেছেন একটি নেটওয়ার্কের আইপি টিভি যেন অন্য নেটওয়ার্কেও চলতে দেয়া হয়। এছাড়া তাদের কাছে চ্যানেলগুলো ডিস্ট্রিবিউশনে মনোপলি না হয়। সবাই যেন সব চ্যানেল পায়।

    ফেব্রুয়ারি থেকে এই আইপি টিভির সেবা চালু হতে শুরু করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

    এম এ হাকিম জানান, ৩০০ চ্যানেলের একটি আইপি টিভি সার্ভিস প্রোভাইডারকে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

    ‘সেবা দুটি চালু হলে দেশের বিনোদনখাতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। নিয়মিত টেলিভিশন দেখার হার কমলেও অনলাইনে টেলিভিশন দেখার দর্শক বাড়বে। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে দেশে অন্তত চার-পাঁচ লাখ আইপিটিভির দর্শক  হতে পারে। এছাড়া ভিডিও অন ডিমান্ড সেবা নেওয়া গ্রাহকের সংখ্যাও অনেক হবে’ বলছিলেন তিনি।

    বিশেষ সুবিধা কী এই আইপি টিভিতে ?

    ক্যাবল টিভি বা ডিসের লাইনে আমরা ইচ্ছেমতো চ্যানেল বদলাতে পারি মাত্র। এর বাইরে তেমন কোনো সুবিধা নেই। কিন্তু আইপি টিভির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা আপনি আপনার সময়মতো অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন।

    যেমন একটি অনুষ্ঠান রাত ১০টায় প্রচারিত হবে। আপনি ওই সময় ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু অনুষ্ঠানটিও  মিস করতে চান না। আইপি টিভি এই অনুষ্ঠান আপনি যখন দেখতে চান তখনই সম্প্রচার করবে। আইপি টিভি আপনার নির্দেশমতো ওই অনুষ্ঠান সয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড করে রাখবে এবং আপনার সময়ে প্রচার করবে।

    এছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতার ফলে ক্যাবল টিভি অপারেটরগুলোর ‘দৌরাত্ম্য’ কমবে। ছবির মান ভালো হবে যেমন এইচডি ও ফোরকে রেজ্যুলেশনে টিভি দেখা যাবে।

    আর একটি ইন্টারনেট লাইনে আইএসপিদের কাছ হতে ভয়েস, ডাটা ও আইপি টিভির সেবা নেয়া যাবে। ফলে ট্রিপল প্লের বিভিন্ন প্যাকেজে গ্রাহকের খরচ বেশ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    আসলে এই আইপি টিভি কী? 

    বাংলাদেশে এখন সবার বাসায় বাসায় যে ক্যাবল টিভি চলে সেখানে আমরা দেখি বাইরে হতে একটি গোল মোটা কালো একটি ক্যাবল বা তার এসে টিভির সঙ্গে প্লাগইন বা যুক্ত হয়েছে। একটু উন্নত ছবি ও বেশি চ্যানেলের জন্য এই ক্যাবল আবার একটা সেট-টপ বক্স হয়ে টিভির সঙ্গে যুক্ত হয়। সাধারণভাবে একে ডিসের লাইন বলা হয়ে থাকে।

    একেকটি এলাকায় এই ডিসের লাইনের অপারেটর বা ক্যাবল অপারেটর থাকে। ক্যাবল অপারেটরের স্টেশনে বড় বড় ডিশ অ্যান্টেনা থাকে যেখান হতে স্যাটেলাইট থেকে ব্রডকাস্ট সিগন্যাল এসে ওই ক্যাবলের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি টিভিতে অডিও-ভিডিও সম্প্রচারিত হয়।

    আইপি টিভি  বা ইন্টারনেট প্রোটোকল টিভি বা ইন্টারনেট টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই সিগন্যাল ইন্টারনেট দিয়ে আসে, ব্যস। এর জন্য অ্যান্টেনার দরকার হয় না।  মানে এখানে কোনো রেডিও সিগন্যালে অডিও-ভিডিও না এসে না ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে আসে। যেটি একসঙ্গে ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড হয়ে স্ট্রিমিং বা সম্প্রচারিত হতে থাকে।

    কত রকম সেবা এতে ? 

    আইপি টিভি সেবার অন্যতম একটি হচ্ছে ভিডিও অন ডিম্যান্ড বা ভিওডি। নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স বা এমন ধরনের সেবা হচ্ছে ভিওডি। এতে মুভি, নাটক, টিভি সিরিয়ালসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্লে লিস্টে দেয়া থাকে। এখানে গ্রাহক যখন যেটা খুশি দেখে নিতে পারেন।

    আরেক ধরনের আইপি টিভি সেবার মধ্যে রয়েছে এন্টারপ্রাইজ ক্যাবল টিভি চ্যানেলগুলো মানে  মানে এই স্টার জলসা, স্টার স্পোটর্স, জিটিভি, ডিসকভারি, চ্যানেল একাত্তর ইত্যাদি চ্যানেল দেখানো।

    আইপি টিভি বা ভিওডি সেবা নিতে যা লাগবে ?

    ডিসের ক্যাবলে যেভাবে টিভি দেখা যায় এখানেও বিষয়টি খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। আইপি টিভি অপারেটররা ক্যাবল অপারেটরদের মতোই সংযোগ দিয়ে যাবে। তবে এখানে ইন্টারনেট লাইনে বা ক্যাবলে আইপি টিভির সেবা পাওয়া যাবে।

    এজন্য ৫ হতে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগ হলেই হবে। এতে এইচডি ছবিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে। ইন্টারনেট টিভি বা স্মার্টটিভি হলে সরাসরিই ইন্টারনেট ক্যাবল টিভিতে সংযোগ হবে। আর স্মার্টটিভি না হলে একটি সেট-টপ বক্স নিতে হবে। এই সেট-টপ বক্স ইন্টারনেট হতে আসা অডিও-ভিডিওকে ডিকোড করবে এবং টিভিতে স্ট্রিমিংয়ে জন্য উপযুক্ত করবে। এই সেট-টপ বক্স আইপি টিভি অপারেটররা দিয়ে যাবে।

    এছাড়া চাইলে কম্পিউটারে এই আইপি টিভি দেখতে পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু অপারেটরের সংযোগ থাকলেই হবে।

    কেমন খরচ ? 

    বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠকে আইপি টিভির সেবার জন্য সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন। তবে এই সেবার বিভিন্ন ধরণ অনুয়ায়ি ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টাকার বিভিন্ন ধাপে পাওয়া যাবে।

    কত টাকায় কতটি পে চ্যানেল থাকবে এসব ঠিক করে দেবে বিটিআরসি। স্মার্টটিভি না হলে সেট-টপ বক্সের জন্য মানভেদে ৩ হতে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে গ্রাহককে।

    এম এ হাকিম বলছেন, প্রতিযোগিতায় হয়ত এখানে ভতুর্কিও দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে বক্সের দাম আরও কমবে। হয়ত এক সময় ফ্রিও দেয়া হতে পারে।

    কীভাবে কাজ করে আইপি টিভি ?

    আমাদের অনেকেরই মনে আছে এক সময় আমরা টিভি দেখতে বাড়ির ছাদে বা বাসার বাইরে উচু করে লম্বা মাছের কাটার মতো অ্যান্টেনা স্থাপন করতাম। এই অ্যান্টেনার সঙ্গে টিভির সংযোগ করা থাকতো একটি চ্যাপ্টা ক্যাবল বা তার  দিয়ে। অ্যান্টেনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটা দিকে রাখা হতো যা দিয়ে রেডিও সিগন্যাল এসে টিভিতে অডিও ও ভিডিও চলতো। এতে বিশেষ করে বিটিভি দেখা যেতো। পরে ডিসের মতো অ্যান্টেনা এলো। সেই সময়ে বেশ দামি এই অ্যান্টেনায় কিছু বিদেশী চ্যানেল দেখা যেতো। এটি এলাকায় দু’একটি বাড়িতে দেখা মিলতো।

    টিভি স্টেশন হতে অনুষ্ঠান বেতার তরঙ্গে রূপান্তরিত করে অ্যান্টেনা দিয়ে বাতাসে ছেড়ে দেয়া হতো। আমাদের বাসার ছাদে থাকা অ্যান্টেনা সেটি ধরে তরঙ্গ হতে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তর করে টিভিতে দিয়ে দিতো। টিভি সেই সিগন্যালকে অডিও-ভিডিওতে রূপান্তর করে দেখাতো।

    আইপি টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই সময় অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো হয়ে থাকে। আর অনুষ্ঠানে রেকর্ড করে রেখে বা চ্যানেলের পুরোনো অনুষ্ঠান দেখতে গেলে সেটি বেশ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্ভার হতে দেখতে হয়। সার্ভারে অনুষ্ঠানগুলোর  ডিজিটাল ফরম্যাট সংরক্ষিত থাকে তা অনুষ্ঠান এনালগ রেকর্ড হলেও।

    আইপি টিভি প্রথমে আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে সার্ভারের সাথে সংযোগ নেয়। এরপর সার্ভার সফটওয়্যার দিয়ে টিভিতে অডিও-ভিডিও পাঠায়। স্মার্টটিভিতে তা সরাসরি চলে। আর স্মার্টটিভি না হলে সেট-টপ বক্স লাগে । এই বক্স ইন্টারনেট থেকে আসা অডিও-ভিডিও ডেটা প্যাকেট গুলো নিয়ে তা ডিকোড করে টিভিতে চলার উপযুক্ত করে।

    নিউজ: techshohor.com



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ