বিস্তারিত
  • শেষ বিদায়ে জনগনের ভালোবাসায় সিক্ত কবি নাজমুল: তাজ উদ্দিন আহমদ


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 07 June, 2024, 6:46 PM || মুক্তমত


    কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল ১৯৭৭সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বিশ্বনাথ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আওতাধীন অলংকারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি মর্তুজ আলী, মা মোছা. আপ্তবান বেগম। সাত ভাই বোনের মধ্যে নাজমুল ছিলেন সবার বড়।

    তিনি তার নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৮ সালে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। বেশ কিছুদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল ৭ জুন সকাল ৮:১৫ ঘটিকায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আই সি ইউ তে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন—–)।

    বিগত কিছুদিন যাবৎ সে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল। নজমুল ইসলাম মকবুলের এই অসময়ে চলে যাওয়ার কারণে বিশ্বনাথবাসী একজন সম্ভাবনাময় উদীয়মান তরুণ ও সমাজ সংস্কারককে হারালো।

    আমি মনেকরি তাঁর মৃত্যুতে অলংকারী ইউনিয়ন তথা বিশ্বনাথে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। সে ছিল নানাবিধ প্রতিভার অধিকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়েই সে ছড়া ও কবিতা লিখতে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার লিখিত একাধিক কবিতার বই, ভ্রমণ কাহিনীসহ একাধিক অডিও এলবাম প্রকাশিত হয়েছে।

    সে সর্বাবস্থায় দেশীয় সংস্কৃতির লালন করত। পৌষ মেলা, শীতকালীন পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলার আয়োজন সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস সমূহ বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ,১৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করত।

    খেলাধুলার প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল। বিভিন্ন সময় সে ক্রীকেট খেলা ও ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করত। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সে নিয়মিত ছাত্র শিক্ষকদের সহযোগিতায় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার আয়োজন করত। আর এসব অনুষ্ঠানাদিতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত গুণী জনদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসত।

    তার এসব কর্মতৎপরতার কারণে আমাদের এ অঞ্চলে নিয়মিত বরেণ্য গুণীদের পদচারণা ছিল। নাজমুল ইসলাম মকবুলের বাড়ি আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামে। সম্পর্কে ভাতিজা। বয়সের দিক দিয়ে ৮-৯ বছরের ছোট হলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার মাধ্যমে আসার কারণে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই।

    ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও সে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেছে। বিগত ৫ মে ‘২৪ আমি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পূর্বে তার বাড়িতে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেছিলাম। সেখানে ডাঃ শামসুল ইসলাম সহ অনেক অতিথি ছিলেন। তখনো তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিলো। তার মনোবল দৃঢ় ছিল বিধায় সে ভেঙ্গে পড়েনি।

    আমি যুক্তরাজ্যে থাকাকালে দ্রুত তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হলে সে খবর সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আমার কাছে তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি ওয়াকিবহাল না থাকায় কোন সদুত্তর দিতে পারিনি।

    নাজমুলকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে আমার সর্বশেষ কথা হয়েছিল প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের সাথে। তিনি আমাকে বলেছিলেন দেশে এসে তার খোঁজ খবর নিয়ে সবাইকে জানাতে। দেশে আসার পরই আমি খুঁজ নিয়ে সিলেট নগরীর মধু শহীদ এলাকায় আল্ রাইয়ান হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলাম। সেখানে গিয়ে জানলাম আমাদের এলাকার আরেক কৃতিসন্তান ডাক্তার মইনুল ইসলাম ডালিমের সহযোগিতায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আই সি ইউ তে স্থানান্তরীত করা হয়েছে । সেখানে যেতেই তার মুক্তিযোদ্ধা পিতা ও ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা।

    তাঁরা উভয়েই জানালেন আমি বিদেশ থাকাকালীন সময়ে সে আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য তাঁদেরকে বারবার তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। যাইহোক আমি এপ্রোনপরে আইসিইউর ভেতরে গেলে আমাকে দেখে সে পানি খেতে চাইলে আমি দেয়ার চেষ্টা করতেই ডিউটি রত ডাক্তার আমাকে পানি দিতে নিষেধ করলেন আমি তার মুখে আর পানি দেইনি।

    কর্তব্যরত নার্স আমাকে বের হয়ে আসার অনুরোধ জানালে আমি চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে আসি। তার বয়স্ক পিতা কান্না জড়িত কন্ঠে আমার কাছে তার জন্য দোয়া চাইলেন, আমিও তাঁকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলাম।

    বাসায় এসে আর কোনো কিছুতে মন বসছেনা। ভীষণ খারাপ লাগছে। রাতে তার কথা ভেবে ভালো ঘুম হয়নি। সকাল বেলা আমার এক চাচাতো ভাইয়ের ফোন। নাজমুল মারা গেছেন। মনটা খারাপ ছিল, আরও খারাপ হলো। ম্রিয়মাণ আশা টুকুও শেষ হয়ে গেল। এটাই প্রত্যাশিত ছিল।

    হাসপাতালে খবর নিলাম, লাশ বাড়িতে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন, অল্পক্ষণের মধ্যে যাত্রা শুরু হবে।বাদ আছর জানাজা। বিশ্বনাথ ও আশপাশের উপজেলার হাজারো গুণী জনদের উপস্থিতিতে জানাজা সম্পন্ন।

    বিদায়! হে মানবতার ফেরিওয়ালা। তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের মধ্যে তোমা র কৃতকর্মের জন্য। মহান আল্লাহ তুমাকে বেহেশতের সর্বোত্তম স্থান জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। শোকাহত পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক দান করুন।আমীন।

    লেখক: তাজ উদ্দিন আহমদ, ব্যবস্থাপক প্রাইম ব্যাংক আম্বরখানা শাখা, সিলেট



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ