বিস্তারিত
  • বাঁশতলায় ঠাঁই হলো বিধবা আলকুমা’র!


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 01 October, 2020, 6:29 PM || সিলেট


    সাইফুল ইসলাম বেগ, গোয়াইনঘাট (সিলেট) থেকে ফিরে স্বামী গত হবার পর নিজেদের মাটির কুঁড়েঘরেই দিনযাপন করছিলেন বিধবা আলকুমা বেগম (৫০)। ভাঙ্গাঘর জোড়াতালি দিয়ে মাদরাসা পড়–য়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে দিন কাটছিল তার।

    ঠুকটাক অন্যের সাংসারিক কাজ-কর্ম ও মানুুষের সাহায্যে জীবন-জীবিকা চলছিল মা-মেয়ের। এ অবস্থায় তাদের দালান ঘর নির্মাণের স্বপ্ন দেখান পাশের বাড়ির মৃত মাসুম মিয়ার ছেলে মাওলানা বেলাল আহমদ। তিনি বিধবার কুঁড়েঘরের ছবি ও ভিডিওচিত্র স্যোসাল মিডিয়ার ছড়িয়ে দেন।

    লাইভে সাহায্য চান ঘর নির্মাণের জন্যে। বিভিন্ন ভাবে সংগ্রহ করেন বিপুল অর্থও। পরে বিধবার জন্যে দায়সারা ঘর নির্মাণ করে ফেলে রাখেন তিনি। বিধবা আলকুমার ঘর অসম্পূর্ণ রেখেই বেলাল নিজের ভিটায় নির্মাণ করেন নতুন ঘর। এদিকে নতুন ঘরের আশায় কুড়েঘর ভেঙে মেয়ে নিয়ে দীর্ঘ ছ’মাস ধরে বাঁশতলায় খড়কুটোর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন বিধবা আলকুমা।

    ঘটনাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বাগ বাড়ি গ্রামের। আলকুমা ওই গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর স্ত্রী।

    সরেজমিন বাগ বাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আলকুমা বেগমের আগের ভাঙ্গা কুড়েঘর’র ঠিক পেছনে দু’কামরার একটি নির্মানাধীন ঘর রয়েছে। উপরের ছাদ বা টিনের চালা নেই। অসম্পূর্ণ এ ঘরটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী।

    কিছু দূরে বাঁশতলায় খড়কুটোর ঘরে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বিধবা আলকুমা বেগম। তার দু:খের শেষ নেই। তিনি এ প্রতিবেদকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ঘর নির্মানের জন্যে টাকা উঠলেও শেষ হয়নি ঘরের কাজ। ভিটে থেকে গাছও কেটে দিতে হয়েছে। তবুও এখন আমাদের মাথা রাখার জায়গাও নেই। খড়ের ঘরে কাঁদা-পানিতেই বর্ষা কাটিয়েছি।

    আমরা এখন কোথায় যাবো? কার কাছে বলবো এসব.? কে শুনুবে গরীবের কান্না? গ্রামবাসীরা জানান, মাওলানা বেলাল আহমদ ওরফে বিশটেকি মোল্লা শুধু বিধবা আকলিমার সাথেই নয়, প্রতারণা করেছেন আরো অনেকের সাথে। গ্রামের সহজ-সরল লোকদের বিভিন্ন ভাবে লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ। এমনকি মসজিদের পাশে মক্তব নির্মাণের নামে টাকা সংগ্রহ করলেও কাজ শেষ করেননি। দেননি নির্মাণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও।

    যে কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন, সে কাজ না হলেও বেলালের নিজের কাজ হয়েছে ঠিকই। এছাড়াও গ্রামের যুবক ফয়জুল করিমকে বিদেশ পাঠানোর নামেও আত্মসাত করেন সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী মো. জামাল মিয়া বলেন, তার প্রতারণায় আমরা অতিষ্ঠ। সে বিধবা আলকুমাকে চরম বেকায়দায় ফেলেছে। আর মসজিদের মক্তব নির্মাণে আমাদের সাথে করেছে ‘দু’নম্বরি’।

    এখন জিজ্ঞেস করলে বলে, তার নিজের কাজই শেষ করতে পারছেনা। শেষ হলে পরে এসব বিষয় দেখবে। এসব বিষয়ে জানতে মাওলানা বেলাল আহমদের বাড়ি গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফেনে কথা হলে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম স্বামীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দাতারা অর্থ বন্ধ করে দেয়ার বিধবার ঘর ও মসজিদের মক্তবের কাজ সর্ম্পূূণ করতে পারেননি তার স্বামী। টাকা আসলে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। আর ভিসার জন্যে ফয়জুল ৩ লাখ নয়, দিয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। পরে ক্রমান্বয়ে তার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।

    স্থানীয় ইউপি পরিষদ সদস্য ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কি বলবো এগুলো তার (বেলালের) বাটপারি। বিধবা আলকুমার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা আমানবিক। তার ঘর নির্মাণের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করে বেলাল আত্মসাত করেছে। একই কায়দায় ঝুলিয়ে রেখেছে মসজিদের মক্তবও নির্মাণের কাজও। আমরা বিধবার ঘর ও মসজিদের মক্তব নির্মাণের হিসেব চাইলে সে পালিয়ে বেড়ায়। আর বিদেশ পাঠানোর নামে ফয়জুলের আত্মসাত করা অর্থও এখনও পুরোটা ফেরত দেয়নি সে।

    গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, সরেজমিন গিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ