বিস্তারিত
  • ভাতিজি হাসিনার স্বৈরতন্ত্র রুখতে মাঠে বয়োজ্যেষ্ঠ চাচা


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 03 December, 2018, 11:41 AM || মুক্তমত


    দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। সে নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে দশকব্যাপী চলে আসা স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটাতে শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নেমেছেন সে দলেরই আরেক প্রাক্তন সহযোদ্ধা ড. কামাল হােসেন। সরকারের অপশাসন, রাজনৈতিক-নিপীড়ন আর মতপ্রকাশের দলনসহ বিভিন্ন বিষয়ের কড়া সমালোচক কামাল হোসেনের এই অবস্থানকে ভাতিজির সঙ্গে (শেখ হাসিনা) এক বয়োজ্যেষ্ঠ চাচার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

    বুধবার আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।

    ‘দ্য এইজিং আংকেল সিকিং টু ব্রীং ডাউন বাংলাদেশ পিএম হাসিনা’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ হাসিনার বাবার সঙ্গে লড়াইয়ে অংশ নেয়া এক সময়ের সহযোদ্ধা কামাল হোসেন এখন দেশটির নিপীড়নের শিকার বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন। দেশটিতে দশকব্যাপী চলমান স্বৈরতান্ত্রিকতার অবসান ঘটাতে চাইছেন তিনি।

    শেখ হাসিনা রাজনীতি জীবনের শুরু থেকেই ড. কামাল হোসেনকে কাকা (চাচা) বলেই সম্বোধন করে আসছেন মন্তব্য করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরের আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবি কামাল হোসেনের নেতৃ্ত্বাধীন নতুন জোটের সঙ্গে লড়তে হবে শেখ হাসিনাকে।

    বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন প্রসঙ্গে ৮২ বছর বয়স্ক বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, সঙ্কটময় মুহূর্তে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্যই বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করা হয়েছে।

    ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্ধেকেরও বেশী সংসদীয় আসনে কোনো ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচন করে ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সেই নির্বাচন বয়কট করে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও তাতে অংশ নেননি।

    একতরফা নির্বাচনের সরকারের কড়া সমালোচনা করে রয়টার্সকে কামাল হোসেন বলেন, “গত পাঁচ বছরে যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অনির্বাচিত কোন সরকার এর আগে এভাবে পাঁচ বছর দেশ চালায়নি, আমরা তা কখনো দেখি নাই।”

    বয়স বেশি হবার কারণে প্রধানমন্ত্রী হবার কোনও আগ্রহ নেই বলে জানান কামাল হোসেন।

    জোটের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে কামাল হোসেনের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানকে তুলনা করছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে। এবছরই মাহাথির ৯২ বছর বয়স্ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন। এপ্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কামাল বলেন, “হয়তো আমরা চেয়ে তাঁর (মাহাথির) শারীরিক অবস্থা খুব ভালো।”

    কামাল হোসেন বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী ছিলেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে কারাবরণও করেছেন তিনি।

    আওয়ামী লীগের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দল থেকে সরে দাঁড়ান। আর ১৯৯০ সালের দিকে গণফোরাম গঠন করেন।

    আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের বিপক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হবে বলে আভাস দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

    সরকার ধর-পাকড় নীতির বিপক্ষে সমালোচকরা নিন্দা জানাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলগুলোর নামে ভূতুড়ে মামলা বা ধরপাকড়ই শুধু করছেনা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করায় গ্রেফতার করা হয়েছিল খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলমকেও। শহীদুলের এ মামলায় জামিন পেতে কামাল হোসেনের মেয়ে সারাহ সহযোগিতা করেন।

    মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্যমতে বিরোধীমত দমন এবং মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করে কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা বেশ কিছু আইন পাস করেছেন। এসব আইনকে পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে মন্তব্য করেন কামাল হোসেন।

    তিনি বলেন, “এটা করা হয়েছে শুধু একদলের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য না বরং এক নেতার শাসনও প্রতিষ্ঠার জন্য।”

    বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচার মন্তব্য করে খ্যাতিমান এই আইনজীবি রয়টার্সকে আরো বলেন, “বর্তমান সরকারের মতো একটা স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় আসলে এর একটা আশংকাজনক বিপদ রয়েছে। আল্লাহ না করুক, এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে তাহলে আমাদের অনেকে তখন দেশেই থাকার সুযোগ পাবেনা।”

    তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, বিরোধীমতের মানুষেরা সরকারের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পূর্বের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতা, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে বেশি করে পর্যবেক্ষক রাখার এবং একিসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।

    কামাল হোসেন বলেন, “বাজে নির্বাচন হলে সেটা বেশিদিন টিকবেনা।”

    তিনি বলেন, “যারা মনে মনে স্বৈরতন্ত্রকে লালন করে বেড়াচ্ছে তারা জানেনা জনগণের শিরায় শিরায় গনতন্ত্র রক্ষার শপথ কতটা দৃঢ়।”

     

    রয়টার্স প্রতিবেদন



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ