বিস্তারিত
  • তপন দাশ এর ‘খাঁড়া’


    বিশ্বনাথ বিডি ২৪ || 07 September, 2020, 12:00 AM || বিশ্বনাথ


    আমার এক বন্ধু বিদেশ থাকে, সুযোগ হলে প্রায়ই আমাকে ফোন করে, ফোন করেই আমাকে বলে আমিতো খাঁড়া। তার কথা বুঝেও না বুঝার ভান করে, অন্য প্রসঙ্গে চলে যাই, তার শরীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিজনদের কথা শুনি, সাপ্তাহ খানেক পর আবারও ফোন করে আমাকে বলে ফ্রেন্ড আমিতো খাঁড়া,

    কথাগুলো শুনে তাকে বললাম, তুমি কোথায় খাঁড়া? পার্কে, মার্কেট, রাস্তায়, কোন জায়গায় খাঁড়া? যে বললো বন্ধু এই খাঁড়া সেই খাঁড়া নয়, আমিতো নির্বাচনে খাঁড়া, কোথায় খাঁড়া? সে বললো বিশ্বনাথে নির্বাচন করব।

    তাকে বললাম ইউনিয়ন, পৌরসভা উপজেলা, জাতীয় সংসদ কোথায় নির্বাচন করবে? সে বলে পৌরপ্রশাসক এ। পৌরপ্রশাসক তো সরকার নিয়োগ করে ফেলেছে। পৌরপ্রশাসকের তো নির্বাচন হবে না। সাধারণত আমার জানামতে পৌরপ্রশাসক পদে ইলেকশন হয়না সিলেকশনেই হয়।

    নির্বাচন হবে পৌর মেয়র পদে। কবে হবে তাও অনিশ্চিত। সে বলে হবেতো একদিন।

    আমি বললাম দেখও, সম্ভবত ১৯৯৭ সালে আমাদের উপস্থিতিতে রামসুন্দর হাইস্কুল মাঠে এক অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ বিশ্বনাথকে পৌরসভা ঘোষণা করেন।

    ২৩ বছর আগে ঘোষণা ২৩ বছর পর মানুষের আস্তার ঠিকানা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনাথ পৌরসভার যোগ্য বিধায় পৌরসভা অনুমোদন দিয়েছেন।২৩ বছর আগে ঘোষণা আর ২৩ বছর পর অনুমোদন। আর কত বছর পূর্ণ হলে পৌরসভার কার্যালয়, দপ্তর, অবকাঠামো নির্মাণ ও তোমার স্বপ্নের নির্বাচন হবে তার কোন সম্ভাবনা নেই, আর তুমি খাঁড়া।

    এ যেন মুলে নাই ঘর, পুব দিকে দুয়ার, ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরর্দার। আমার কথাগুলো শুনে সে বললো, দোস্ত হায়াত মউত আল্লাহর কাছে, বেঁচে যদি থাকি বন্ধু যেদিন বিশ্বনাথ পৌরসভার তফশিল ঘোষণা হবে সেদিনই আমি খাঁড়া। অবাক হয়ে তাকে বললাম নির্বাচন করার এত আগ্রহ কেন তোমার? সে বলে আমি জনগনকে চিনব, জনগন আমাকে চিনবে, সমাজে পরিচিত হওয়ার জন্য, মানুষের সেবা ও খেদমত করার জন্য আমি স্বপ্ন দেখি বিশ্বনাথ একদিন সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ার মতো শহর হবে, প্রতি উত্তরে আমি বললাম, ফ্রেন্ড এতো স্বপ্ন আমাদের দেখিওনা।

    ১৮ বছর ধরে দশঘর ইউপি নির্বাচন হচ্ছে না, ৯বছর ধরে দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে না। ৩ বছর হয়ে গেল উপজেলা অডিটরিয়াম সম্পন্ন হয় নাই। সদর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে নাই, ফায়ার স্টেশন সার্ভিস নাই। রশিদপুর গোলচত্তর, বাস, ট্রাক টারমিনাল নাই, গ্যাস নাই, বাজারের বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্থ না থাকার কারণে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ও জনগনকে ঘা ঘেষে চলাচল করতে হয়। বাসাবাড়ী ও বাজারের ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দেওয়ার কারণে ভাসমান মানুষের গোসল করার কোন সুবিধা নাই।উপজেলার প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ নাগরিক সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে সিলেট শহরে বসবাস করে। পরেরদিন সিলেট থেকে এসে সরকারী, আধা সরকারী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চাকুরী, ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে। এখনও বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর, বৈরাগী, সিংগেরকাছ, দক্ষিণ বিশ্বনাথ, উত্তর বিশ্বনাথ, মাছুখালী বাজার, জানাইয়া, রাজনগর, হাজী তবারক আলী রোডসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট মানুষের চলাচলের অনুপযোগী। সবগুলো রাস্তা এখন লাইফ সার্পোটে।মানুষ অসুন্তষ্ট। খুব্ধ, জনপ্রতিনিধিদের উপর মানুষ বলে সেই নুরুল ইসলাম খাঁন এমপি থেকে শুরু করে বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানের আমল দেখছি। বিশ্বনাথ ‘যেই লাউ সেই কদু’। আর তুমি কি স্বপ্ন দেখাবে? তার চেয়ে তুমি বিদেশ যে কাজ করছিলে তাই করো। আমার কথা শুনে বন্ধু বললো আমার অর্থ বিত্ত সবই আছে, নেই শুধু তোমাদের মতো সম্মান ও পরিচিতি।

    তুমি কি চাওনা আমার সম্মান ও পরিচিতি হউক। আমি মেয়র হই, চাইতো বন্ধু তুমি অনেক কিছু হও। দেশের মুখ উজ্বল করো। তবে বন্ধু কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। মাছ ধরবে, পানিতে নামবে না। ঘরে বসেতো বাঘ শিকার হবে না। রাজনীতি করতে হলে অর্থ পুজি বিনিয়োগ করতে হয়। মানুষের সুখ দু:খে পাশে থাকতে হয়। অসহায় মানুষকে আর্থিক সাহায্য ও সহযোগীতা করতে হয়।আমিতো মনে করি তুমি বিশ্বনাথে তোমার অর্থ বিনিয়োগে একটি বড় কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করোও, বড় হাসপাতাল স্থাপন করো। ২/৩ শিল্পকারখানা গড়ে তুলো। যেখানে শিক্ষিত-অর্ধ শিক্ষিত, অশিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থান হবে। তোমার মালিকানাধীন প্রতিষ্টানে হাজার হাজার লোক চাকুরী করবে। অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের বিভিন্ন রাস্তাঘাট নিজ উদ্যোগে করে দাও, স্কুল কলেজ, ব্যাংক বীমা স্থাপন করো। তাহলেই বিশ্বনাথ একদিন বাস্তবে তোমার সিঙ্গাপুর-মালেশিয়া না হলেও একটি সুন্দর শহর ঘরে উঠবে।

    দেখবে লোক তোমায় কত ভালবাসে। শুধু বিশ্বনাথ নয়, বাংলাদেশ তোমাকে চিনে ফেলবে। তোমার ঢোল আর তোমাকে পেটাতে হবে না। জনগনই তোমার ঢোল বাজাবে। মানুষের মুখে মুখে তোমার জয় গান শুরু হবে। এলাকার মানুষ তোমার পক্ষে স্লোগান দিবে। তোমার নির্বাচন করা লাগবে না। জনগনই তোমাকে পৌর মেয়র নয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করবে। আমার কথাগুলো শুনে বন্ধু আমায় বলে বন্ধু তুমি আজও অল্ড মডেল রয়ে গেলে। রাজনীতি করেও রাজনীতির মারপেছ শিখলে না। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রায় তুমি বিশ্বাসী হলেও আমি বিশ্বাসী নই। তোমার এনালগ সিস্টেম চিন্তাধারা আমার লক্ষ উদ্দ্যেশ কোনটাই বাস্তবায়ন হবে না। বন্ধু এখন ডিজিটাল যুগ, সব কিছু আধুনিক।

    আমি মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে ফেসবুক, ইমু, ম্যাসেন্জার, ওয়াটসাপ এ ম্যাসেইজ মেইল দিয়ে আমার পরিচিতি জনগনের সামনে প্রকাশ করব। আর কিছু ক্যালেন্ডার, পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে জনগনকে আমি নির্বাচনে খাঁড়া সেটা ঘোষণা করব। আর জনগনকে বলব আপনাদের চিন্তায় বছরের পর বছর, মাসের পর মাস, রাতের পর রাত বেশির ভাগ সময় আমার ঘুম আসে না। আমি শুধু আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।

    আপনাদের খেদমত করব বলে আপনাদের সেবা করা থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না। আমাকে সেবা করার সুযোগ দিন।আমার কথাগুলো শুনে জনগণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করলে আমি মেয়র, আর পরাজিত করলেও আমি মেয়র। জানতে চাইলাম কিভাবে? বন্ধু বলে দায়ীত্বে থাকাকালীন সময় মানুষ যেভাবে ইউনিয়নের পরিষদের মেম্বারকে মেম্বার বলে। দায়িত্ব থেকে সরে গেলেও জনগন ওই লোককে মেম্বারই বলে।

    তাই আমাকে জনগন বিজয়ী করলেও মেয়র, পরাজিত করলেও মেয়র বলবে। পাশ করলেও মেয়র সাব ফেইল করলেও মেয়র সাব বলবে। তাই আমি খাঁড়া। বন্ধুকে বললাম খাঁড়াই থাকো। দেখ যেন ……….    

     লেখক: এডভোকেট (শিক্ষানবীশ)  কার্যনির্বাহী সদস্য, উপজেলা আওয়ামীগ বিশ্বনাথ



সর্বশেষ খবর


নিউজ খুঁজুন
আর্কাইভ
ফেইসবুক পেইজ